
পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয়
- আপলোড সময় : ২০-০২-২০২৫ ১১:৩২:৪৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-০২-২০২৫ ১১:৩২:৪৩ পূর্বাহ্ন


জাতীয় নির্বাচন না স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হবে এ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলসমূহের বিদ্যমান দূরত্ব ও নির্বাচনের সময় নিয়ে সংশয়ের অবসান ঘটেনি। বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এ দূরত্ব ক্রমবিকাশমান দ্বন্দ্বে রূপ নিচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে কিছু কাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। সেই সন্দেহটা হচ্ছে আদৌ তারা (সরকার) নির্বাচন নিয়ে আন্তরিক কি না।
তিনি বলেন, কারণ আছে এই সন্দেহ তৈরি হওয়ার। আপনারা খবরে দেখেছেন আপনারা যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেছেন, ফ্যাসিস্টের লোকেরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে তারা পারবে। এটা কি আপনারা মেনে নেবেন? এর থেকে এখন এটাই প্রমাণিত হয়েছে তারা এখন তাদের নিজেদের স্বার্থে ওই ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা গতকাল এ কথাটা বলেছেন, অনেকেই হয়ত তার বক্তব্যটি খেয়াল করেননি। তার মানে কি আমরা এটা মনে করব তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য তারা বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন। সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেব না। এদেশের মানুষ তা হতে দেবে না।
সরকারে থেকে দল গোছানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল নেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এসব বিষয় দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
এদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আসিফ মাহমুদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিএনপি কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নামে দুরভিসন্ধিমূলক চক্রান্ত করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচিত সংসদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
অপরদিকে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে না কি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হবে সে বিষয়ে কোনো মতামত জানাননি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক থেকে বের হয়ে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, অনেকে জাতীয় নির্বাচন আগে চায়, অনেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চায়। আমরা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য বা প্রস্তাবনা দেইনি। আমরা বলেছি সংস্কারগুলো হচ্ছে সেগুলো কিছু মূলভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেছেন আগামী ছয় মাসের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার করা যাবে।
অপরদিকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়ে শেষ হলো তিন দিনের ডিসি সম্মেলন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুন্থানের পর নতুন সরকার আসায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে উজ্জীবিত হয়ে জেলায় ফিরবেন তারা।
পাশাপাশি তারা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার নির্দেশনা নিয়ে যাচ্ছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের এই ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করে। উদ্বোধনী পর্ব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে হওয়ার পর মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনগুলো সচিবালয়ের পাশে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
গত মঙ্গলবার সমাপনী দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্পর্কিত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সমাপনী হয় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনে।
ডিসি সম্মেলন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।
মূল্যায়ন নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং অফিসার, ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সিটি করপোরেশনে বিভাগীয় কমিশনার রিটার্নিং অফিসার। তারা বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। এই প্রশিক্ষণের যোগানদাতা হলো জনপ্রশাসন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এবার যেটা ডিজায়ার করা হয়েছে তাদের গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণগুলো যাতে আরও বেশি ইফেক্টিভ, দক্ষ এবং সাহসী হয়। যে নির্দেশনা দেয়া হবে কাজে এবং কথায় যেন দ্বিমত না থাকে। ঠিক এভাবে তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে, প্রস্তুত করা হবে। নির্বাচন নির্ধারিত সময় যখন হবে তারা যেন ফ্রি-ফেয়ার, আমার ভোট আমি দেবো-এই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এজন্য তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং মাঠ প্রশাসনের সাথে অন্যান্য বিভাগের সমন্বয়ের বিষয়টি জোর দেয়া হয়েছে এবারের সম্মেলনে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সারাদেশ কিন্তু নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো ঘোষণা পায়নি। সরকার সেটা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। ঘোষণার পর যেন সময় না লাগে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সেটা তাদের বলেছি।
অপরদিকে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজও বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে আমাদের ভেতরের রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করতে হবে।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্রে বার বার রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করলে হবে না, এই ঐকমত্য তৈরির দায়িত্ব নিয়ে আমরা অনেক জায়গায় অনেক কথা শুনি, অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট এই রিফর্ম দাও, ওই রিফর্ম দাও।
এত কিছু চিন্তা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট দাওয়াত দেয়া হয় নাই। কোনো কিছু চিন্তা করে ৮ তারিখ তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয় নাই। এত কোনো বিশাল ম্যান্ডেট তাদেরকে দেয়া হয় নাই। সরকারের একটা শূন্যতা ছিল, এই শূন্যতা পূরণ করার জন্য যত শিগগিরই সম্ভব একটা অন্তর্বর্তী সরকার হওয়ার কথা ছিল।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হতে পারে, তার একটি ধারণা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, আমরা কখনো বলিনি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ